লেখক হিসেবে আর কে নারায়ণ উপন্যাসের পাশাপাশি ছোটগল্পে অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং সফলতাও পেয়েছেন। তার ছোটগল্প একই সঙ্গে সরল, সংক্ষিপ্ত এবং পরিপূর্ণ। অকারণ অলংকারবহুল ভাষা প্রয়োগ করে ভার বাড়ানোর মধ্যে তিনি নেই। জটিল রচনাভঙ্গি তাঁর লেখক সত্তার নিকট অপরিচিত। তার লেখায় পাওয়া যাবে চেনা মানুষ, চেনা পরিচ্ছদ, চেনা অঙ্গন, চেনা পরিবেশ এবং প্রতিবেশ, অথচ সেই সুপরিচিতরাই তার কলমের স্পর্শে আশ্চর্যরকম সফল শিল্পকর্ম হয়ে উঠেছে। চেনা জানার মধ্যে, সরল ভাষায় তিনি যে ভুবন নির্মাণ করেন, সেখানে শিল্পের সৌন্দর্য আছে, আছে মহৎ সাহিত্যকর্মের গভীরতা। হাস্যরস আছে, আছে তির্যক বক্তব্য এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। সরল কথনের গভীরে মনস্তত্বের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ আছে তাঁর ছোটগল্পে। সে কারণে তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররা আর বইয়ের পাতায় ঠাই পাওয়া কাল্পনিক সত্তা থাকেন না, তারা হয়ে ওঠেন আমাদের পরিচিত জন, বাস্তবের চেয়েও বাস্তব। সেই একই কারণে তার সৃষ্ট মালগুদি আর কল্পনার শহর থাকে না, বরং ভারতের একটা বাস্তব শহরে পরিণত হয়, হয়ে ওঠে উন্নয়নের ছোঁয়াচ বাঁচা যে কোনো অঞ্চলের প্রতিনিধি। তার মানচিত্রও আঁকা হয়ে যায়। এই সংকলনের গল্পগুলি আর কে নারায়ণের লেখক সত্তাকে দেখার একটা বিনয়ী প্রয়াস।