১৯৭৯ সালে রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত প্রথম উন্মুক্ত সীরাত গ্রন্থ প্রতিযোগিতায় ১১৮৭ টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে “আর-রাহীকুল মাখতূম”। এটি মূলতঃ সীরাতুন নবীর ওপর রচিত শত-শত গ্রন্থের মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত সীরাত সংক্রান্ত বিশাল সংগ্রহশালার একটি নির্যাসগ্রন্থ।
সাহিত্যের রূপ-রস, সৌন্দর্য, মাধুর্য, সাবলীলতা ও প্রাঞ্জলতার মাঝেই নিহিত রয়েছে এই সাহিত্যকর্মের প্রকৃত মূল্য। “আর রাহীকুল মাখতূম” গ্রন্থের সুন্দর ও সাবলীল প্রকাশভঙ্গী এবং লেখকের মোহনীয় শক্তি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বে কোটি-কোটি মানুষের হৃদয়ে। সীরাতুন নবীর প্রতিটি অধ্যায় বয়ান করতে গিয়ে লেখক গ্রন্থের কলেবর অস্বাভাবিক দীর্ঘ করেননি, আবার খুব বেশি সংক্ষিপ্তও করেননি; অথচ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সীরাতগ্রন্থ।
গ্রন্থ রচনায় লেখক ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের ধারাবাহিক বিবরণ পেশ করেছেন। প্রতিটি আলোচনা তিনি বিভিন্ন অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত করেছেন। যেসব ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে মতানৈক্য রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে লেখক সবকিছু পর্যালোচনা করে যেটি সঠিক মনে করেছেন সেটির উল্লেখ করেছেন। যেসব ক্ষেত্রে ভিন্ন মত পোষণকারীদের তথ্য লেখকের কাছে সঠিক মনে হয়নি সেসব ক্ষেত্রে তিনি যুক্তি প্রমাণের ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। পাশাপাশি তথ্যের উৎস হিসেবে গ্রন্থটিতে লেখক অসংখ্য গ্রন্থের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থের শুরুতে লেখক রাসূল এর আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীতে বিরাজমান বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। আরবের ভৌগোলিক পরিচয়, তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন জাতির অবস্থান, আরবের নেতৃত্ব ও শাসন ব্যবস্থা, আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদ, জাহেলী সমাজের চারিত্রিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে লেখক এ পৃথিবীতে রাসূল এর আবির্ভাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অতঃপর রাসূল এর পবিত্র ও সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবির এক অনবদ্য উপস্থাপনা গ্রন্থটিকে করেছে প্রাণবন্ত।
রাসূল এর দাওয়াতের বিভিন্ন কৌশল ও পর্যায় বর্ণনা হতে শুরু করে, বদর, ওহুদসহ বিভিন্ন যুদ্ধ, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ্জ, রাসূল এর ওফাত পর্যন্ত সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনার পর রাসূল এর পরিবারের পরিচিতি, রাসূল এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনার এক ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে লেখক গ্রন্থটির পরিসমাপ্তি টানেন।
এই অনন্যতায়ই সমগ্র বিশ্বের প্রত্যেক সিরাতপ্রেমীর কাছে সমাদৃত সীরাতগ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে : “আর-রাহীকুল মাখতূম”।