এ-কালের অগ্রণী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বিশ শতকের প্রথম চতুর্থাংশ অতিক্রান্ত হবার আগেই তাঁর জন্ম; অথচ, আশ্চর্য ব্যাপার, সেই শতকের প্রান্তরেখা সম্পূর্ণ পেরিয়ে গিয়ে যখন নূতন শতকে ঢুকছেন, তাঁর পদক্ষেপ তখনও সমান দুঃসাহসী, তখনও জরার জং ধরেনি তাঁর কবিকণ্ঠে। যৌবনবয়সে যেমন ছিল, আজও তেমনি তেজী ও টাটকা তাঁর মানসিকতা; একইসঙ্গে, কবিতার নব-নব দিগন্ত অন্বেষণে ও উন্মোচনে তিনি আজও সমান ক্লান্তিহীন। এই রুগ্ণ সমাজের ব্যাখ্যাতা তিনি, এই দুঃস্থ দিবসের ভাষ্যকার। তাঁর দৃষ্টি যখন মানবসমাজের দিকে, তাঁর চোখে তখন অপার করুণার পাশাপাশি ঝিলিক দিতে থাকে অসীম কৌতুক; আর অন্তহীন বৈপরীত্যে ভরা এই সময়ের কথা যখন বলেন তিনি, তখন তাঁর আর্তি যেমন আমাদের অভিনিবেশের দখল নিয়ে নেয়, তাঁর প্রতিবাদও তখন আমাদের মর্মমূলে বাজতে থাকে। প্রেম, প্রতিবাদ, করুণা, কৌতুক, ব্যঙ্গ, বেদনা, শ্লেষ ও সহানুভূতির এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ ঘটেছে তাঁর কবিতায়, যার দীপ্তি ও দ্যোতনা আমাদের গোটা জীবন জুড়ে ছড়িয়ে যায়। যে-কবি সব সময়েই সমকালের সঙ্গী, এবং ঐতিহ্যকে অস্বীকার না-করেই যিনি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছেন তার সীমানা, তাঁর মানসিক বিবর্তনের বাঁকগুলিকে যাঁরা নির্ভুল চিনে নিতে চান, নীরেন্দ্রনাথের সামগ্রিক কবিকর্ম এই কবিতাসমগ্র তাঁদের সংগ্রহ করাই চাই।