শুধু লেখার গড়নেই স্বমহিম নন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, তাঁর দেখার ধরনটিও একেবারে আলাদা। আধুনিক জীবনের আপাত ঝকঝকে চেহারাটার মধ্যে কোথায় লুকনো ফাঁক ও ফাঁকি, অসঙ্গতি ও অমানবিকতা, দুঃখ ও দীর্ঘশ্বাস—তা তাঁর চোখে যেভাবে ধরা পড়ে, সেভাবে যেন অন্য চোখে পড়েনা। তার প্রধান কারণ, শ্লেষ নয়, জ্বালা নয়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একচোখে সমবেদনা, অন্যচোখে কৌতুক। যেমন, এই ‘কীট’ নামের উপন্যাস। এক প্রবল ব্যক্তিত্ব সম্পন্না স্ত্রী ও তার প্রেমিক, এক তুখোড় সাংবাদিক স্বামী, কখনও উন্মাদ কখনও প্রকৃতিস্থ এক শ্বশুর, মুহূর্তের ভুলের শিকার এক তরুণ এবং তার শরীরী কামনার সহচরী এক রমণীকে ঘিরে গড়ে-ওঠা তীব্র সংকটময় এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে আধুনিক জীবনের যাবতীয় অন্তঃসার শূন্যতাকেই আশ্চর্য মমতায় স্পর্শ করেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও বদলে নেননি কৌতুক প্রসন্ন সেই ভঙ্গি, যা একান্ত ভাবে তাঁর উপন্যাসেরই বৈশিষ্ট্যময় সম্পদ।