সকল বই

চিত্রিত চিন্তারাজি সজাগ গদ্য হয় শব্দের নিশ্চিত আশ্বাসে

চিত্রিত চিন্তারাজি সজাগ গদ্য হয় শব্দের নিশ্চিত আশ্বাসে

Author: মানস চৌধুরী
Delivery Time: 3-7 Days , Cash on Delivery Available
  • বই উপহারঃ বই উপহারঃ
    বিস্তারিত
  • বই উপহার.. বই উপহার..
    বিস্তারিত
  • কম্বো অফারঃ কম্বো অফারঃ
    বিস্তারিত
  • কম্বো অফার.. কম্বো অফার..
    বিস্তারিত
  • ফ্রি ডেলিভারিঃ ফ্রি ডেলিভারিঃ
    বিস্তারিত
Price: ৳500.00 ৳ 400.00 (20.00 % off)
Available Stock
+ Add to Wishlist
Publisher উপকথা প্রকাশন
ISBN9789849611103
Edition2022, 1st Published
Pages310
Reading Level General Reading
Language Bangla
PrintedBangladesh
Format Hardbound
Category প্রবন্ধ-গবেষণা
Return Policy

7 Days Happy Return

গুজব আর রেটরিক- দুইটার ভিতর সাহিত্যগুণ কোনটার অধিকতর উৎকৃষ্ট তা বলার মতো আমি যোগ্য না। ঢাকায় আমার বান্ধবেরা নিশিদিন ২৪/৭ ভাল আর মন্দ, উৎকৃষ্ট আর নিকৃষ্ট, কালোত্তীর্ণ আর অতিসংকীর্ণ সাহিত্যের ভেদবিচারে মনোনিবিষ্ট আছেন। ফলে আগেই নিজের অপারগতা বলে নিতে হলো। এমনকি আমি রিউমার আর রেটরিকের পার্থক্য যে সূক্ষ্মভাবে বুঝিয়ে দিতে পারব তারও ভরসা নেই। ফলে এটা অন্য আলাপ।
গুজব সৃষ্টির কারণে জনগণের একাংশকে দোষারোপ করার চল অতি পুরান। রাজার মাথায় চুল নাকি উইগ, রাণীর বাচ্চা মানুষ নাকি কাক এসব গুজব ছড়ানোর কারণে শূলে চড়ানোর গল্পও সুলভ। মানুষ রাজন্যবর্গের নামে গুজব ছড়ায়। গণগুজব রাজরাজড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা উপায়। সে কারণেই গুজব নিয়ে ক্ষমতাবানদের একটা অস্বস্তি কাজ করে। সেটা তাদের সত্যপ্রীতির কারণে নয়, তাঁদের রাজদণ্ডের সম্ভাব্য দৌর্বল্যের আশঙ্কায়। কিন্তু বাস্তবে রাজবর্গ গুজব ছড়ান আরো অনেক বেশী ও কার্যকরীভাবে। পুরান কাল থেকে আজকের কাল পর্যন্ত রাজবর্গের গুজব অধিক ক্রিয়াশীল। সেটা মঙ্গলগ্রহে ব্যাঙের ছাতা পাওয়া গেছে হোক আর বাংলার কৃষকেরা আজ খুশিতে আত্মহারা হয়েছেন বলা হোক। গণগুজবে ফান থাকে, প্রতিবাদ থাকে, কখনো কখনো বিশ্বাসের কারিগরিও থাকতে পারে। রাজরাজড়ার গুজবে টাইট করে শাসন করার বাসনা থাকে। রাজন্যবর্গের গুজবে বিজ্ঞানী আর কোতোয়াল যুগপৎ কাজ করে থাকেন। ওই যে মঙ্গলগ্রহে ব্যাঙের ছাতা হোক, আর স্পেসে বান্দর ঘুরে বেড়াচ্ছে বলা হোক, ভ্যাকসিনেশন আবিষ্কার হোক, আলু খেলে ভালু হয় বলা হোক। কোতোয়ালের গুজব তৈরির কাজটা আধুনিক কালে হয়েছে। তাঁর কাজ মূলত রাজগুজব পাহারা দেয়া, আর দরকার মতো কচাত কচাত করে মুণ্ড কেটে দেয়া। 'হীরক রাজার দেশে' তে এগুলোর সব সহজ একটা পাঠ দেয়া আছে। অন্তত এই কারণেও সত্যজিৎ রায়কে আমি প্রেম বোধ করি। (আমার সাহিত্যবন্ধুরা তাঁকে মেহেরবানি করে উৎকৃষ্টেই রাখেন, ফলে এযাত্রা কারণ যাই হোক, আমি পার পেয়ে যাব)। গুজব সত্য না মিথ্যা এই প্রশ্ন যাঁদের মাথায় দেখা দেয়, তাঁদের আমি সালাম জানাই । কিন্তু এই প্রশ্নে আটকে থাকলে গুজবের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-ক্ষয়ক্ষতি বা সামর্থ্য মিস করে যাবেন। তার থেকেও বড় কথা রেটরিক বুঝতে সমস্যা হবে। এটা আসলে মাথায় আসতে দেবার মতোই ভাবনা না। গুজব হলো সত্যতার দাবি/ভঙ্গি, ক্রেডেনশিয়াল সৃষ্টিপ্রচেষ্টা, আর প্রতিপক্ষের ক্রেডিবিলিটি বিনষ্ট করার উপায়/অস্ত্র। এদিকে তাকান।
রেটরিক! ধরুন শেরে বাংলা। সেই হাফপ্যান্ট পরা বয়স থেকে তাঁর সম্বন্ধে কী জেনে আসছি! মহান টেক্সট বুক বোর্ডের কারণে যা-যা জেনেছি তা হলো তিনি বইগুলো ছুঁড়ে ফেলতেন (তাও তো তিনি বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের বই দেখারই সুযোগ পাননি), জগে জগে খেঁজুর রস খেতেন (তখনো আরএফএল-এর মৃদুজগগুলো আসেনি, বড় বড় কাচেরই হবে), আস্ত একটা কাঁঠাল খেয়ে ফেলতেন ইত্যাদি। ফজলুল হক সাহেব এগুলো করে থাকতেই পারেন; হয়তো জীবনে কয়েকবার করেছেন, কিংবা হয়তো লাগাতার করেছেন। কিন্তু আমাদের শৈশবে তাঁর খাদন ও পঠন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে এই জ্ঞান কী কাজে লাগল! লোকটাকে একটা অতিকায় কিছু ভাবলাম আমরা। পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক চেতনার কারিগরদের একজনকে শিশুকালে কাঁঠালভক্ষক হিসাবে আপনার চেনার আবশ্যকতা কী? রেটরিক গাঢ় থকথকে ভক্তি কিংবা গ্যাদগ্যাদা বিদ্বেষ দুই জায়গা থেকেই তৈরি হয়ে থাকতে পারে। এরশাদ সাহেবের কবিতা কারা জানি লিখে দিতেন! শুনতে শুনতে লোকে বলতে বলতে লোকে এটাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যে তিনি যে কবিতা লিখে একান্ত অনুগত তাঁর বাংলা একাডেমি থেকে কখনো পুরস্কারের আব্দার করেননি এই সাহিত্য-মহত্ত্বটুকু তাঁর আর বলা হয়ে ওঠে না আমাদের। আর এখনকার আমলে তিনি থাকলে একটা পুরস্কারের কথা কি ভাবতে পারতেন না! কবি এরশাদের জন্য কিছু মায়া কি আপনাদের হওয়া আসে না! রেটরিকে এসব ক্ষতি করে। লাগাতার তামাশা তৈরি হয়, তাতে পাত্র বা পাত্রীর ব্যক্তিত্ব বোঝা হয়ে ওঠে না -- তাঁর ধূর্ততা বা শান্ততা, নৃশংসতা বা ছলাকলা। এই দিক থেকে রেটরিক এমনকি গুজবের থেকেও মারাত্মক। গুজব থেকে দরকার মতো দূরত্ব যতটা সহজে আপনি তৈরি করতে পারবেন, রেটরিকের ফাঁদে আটকা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি আপনার।
আর আটকা পড়ার মানে তো জানেনই। ভুল-কেবলায় ইনার্জি খরচ করতে থাকবেন। ধরা যাক, শেরে বাংলা ১৭ জগ খেঁজুর রস খেতেন কিনা এই জ্ঞান সেবন করে বা তর্কে অংশ নিতে নিতে লোকটাকে চেনার সুযোগ আর কই পান! কিংবা বিদ্যাসাগর মহাশয় মা-কে দেখবার জন্য খরস্রোতা নদীতে মধ্যরাত্তিরে সাঁতরেছেন কতক্ষণ ধরে। এগুলো বীরগাথার রেটরিক। বীরগাথার রেটরিক তবু খেঁজুরের উপর দিয়ে যায়। খলের রেটরিক আরো কেবলাচ্যুত করে। এরশাদ শিকদার কয়জনকে মেরেছিল, তাদের মুণ্ড বা ধড় দিয়ে কী কী করেছিল, কিংবা মাণিকের ধর্ষণ সংখ্যা আসলে কত এই আলাপে আপনাকে কিছুমাত্র আটকাতে পারার মানেই হলো আপনি গৌণ পরিসংখ্যানে মুখ্য বিতর্কের ইনার্জি খরচ করছেন।

0 review for চিত্রিত চিন্তারাজি সজাগ গদ্য হয় শব্দের নিশ্চিত আশ্বাসে

Add a review

Your rating