বাংলাদেশ যেভাবে আজ এক নূতন জাতি রূপে আত্মপ্রকাশ করূল, পৃথিবীর ইতিহাসে বুঝি তার তুলনা নেই। কারণ, প্রত্যেক দেশেরই স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি সুদীর্ঘ অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী প্রস্তুতি থাকে। মধ্যযুগের ধর্মীয় এবং সামন্ততান্ত্রিক সংস্কারের বন্ধন থেকে মুক্তি সামান্য কয়েক বৎসরের মধ্যেই আসতে পারে না। তার জন্য কঠিন তপস্যা এবং কর্মকান্ড উভয়ই আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশ মাত্র তেইশ বছরের মধ্যেই এই বিষয়ে যে-ভাবে অগ্রসর হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তার নিদর্শন বিরল। নিতান্ত সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির উপর সেদিন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ; সত্য, ন্যায় কিংবা শক্তির উপর তা সে দিন প্রতিষ্ঠিত হয় নি। নিরক্ষর সমাজের ধর্মান্ধতা মাত্র পুঁজি করে এ যুগে জাতি হিসাবে কেউ বড় হয়ে উঠতে পারে না, তথাপি এই অসত্যের ভিত্তির উপরই স্বার্থপর একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায় সেদিন এক নূতন রাষ্ট্রের গােড়াপত্তন করেছিলেন।
কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ সমাজের ধ্যান এবং কর্মে যখন এই অভাবনীয় পরিবর্তন সাধিত হচ্ছিল, তখন তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রও তার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে নি। আজ যে বাঙালি জাতির অভ্যুত্থান বাইরের সকলের কাছে এমন আকস্মিক মনে হয়, তার কারণ প্রধানত তাই। জঙ্গীশাসকদের স্থাপিত লৌহ আবরণ ভেদ করে তার কোন সংবাদ। তার একান্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যেও তা প্রচার লাভ করতে পারে নি। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ নিজের পথে নিজেই চলেছিলেন, তার চলার পথে সে দিন কেউ এগিয়ে আসে নি, এমন কি, তার চলার কথা পর্যন্ত আগে কেউ জানতেও পারেনি। এমন কি স্বাধীনতার পর এই জাতির আত্মবিকাশের যে পথ দিকে দিকে উন্মুক্ত হয়েছিল তার কোন সন্ধান আমিও রাখতে পারি নি।