প্রাচীন ও মধ্যযুগ পেরিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শীর্ষস্পর্শী আধুনিক যুগ অতিক্রম করছে মানবসভ্যতা। এত বিবর্তন এবং মানুষের সংগ্রামশীলতার অসাধারণ সাফল্যের পরও কি থেমেছে দরিদ্র-নিম্নবর্গ মানুষের সংগ্রাম? প্রাগৈতিহাসিককালে লড়াই ছিল বুনোপশু ও আরণ্যক বৈরী প্রকৃতির বিরুদ্ধে। এই সময়ে এসে সাধারণ মানুষকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে শোষক মানসিকতার অনমনীয় ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে। আদিকালের ভূস্বামী আর দাসপ্রভুদের ভোগবাদিতা আজ নতুন আঙ্গিকে বিস্তৃত। শত-সহস্র বছর যাবৎ শোষিত উপেনদের উল্লেখনীয় কোনো পরিবর্তন হয়নি সারা পৃথিবীতে। দাবি করা চলে যে জমিদারি প্রথার অবসান হয়েছে বহুকাল আগে। বর্তমানে দেশের সমাজবাস্তবে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস-উপেনদের ‘মরিবার মতো ঠাঁই' দুই বিঘা জমি কেড়ে নেয়ার মতো ঘটনার সমাপ্তি আমাদের সমাজে এখনো ঘটেনি। বরং লুণ্ঠন হরণের প্রক্রিয়াটা তীব্রতর হয়েছে। তাই 'দুই বিঘা জমি' কবিতার উপেনের কাহিনীর একটা চিরকালীন-সার্বদেশিক তাৎপর্য - এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।' এখনো রয়েছে। লোকসাহিত্যের বাউল গানের সুর, বাণী ও দর্শনের প্রতি রবীন্দ্রনাথের মন বেশ আকৃষ্ট হয়েছিল। বিশেষত লালনের উদার মানবিকতাবোধ, সম্প্রদায়-সম্প্রীতির চেতনা রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। রবীন্দ্রনাথের অনেক নাটকেই বাউল ঘরানার চরিত্র পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ নন্দলাল সেনগুপ্তকে লেখা পত্রে নিজেকে 'রবীন্দ্র-বাউল' বলে উল্লেখ করেছেন। অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলেছেন, 'রবীন্দ্রনাথও ছিলেন আসলে এমনি এক খ্যাপা বাউলকবি। জোড়াসাঁকোর অভিজাত পরিবারে না জন্মে ... কুষ্টিয়ায় কি পাবনায় জন্মগ্রহণ করলে তিনিও হয়তো এমনি একতারা হাতে গান গেয়ে গেয়ে খ্যাপার মতো ঘুরে বেড়াতেন। ......