সমকালীন বাংলায় নারীবাদ-সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে যে-কোনও বিষয়কে ‘সরল’ করে বলার বাড়তি একটা চাপ থাকে অনেক সময়। অহেতুক সরলীকরণে প্রায়শই খাটো হয়ে পড়ে বিষয়বস্তু ও যুক্তিক্রমের অভিঘাত। অধরা থেকে যায় নানান সূক্ষ্মতর পাঠের অবকাশ।
বস্তুত, বাংলার পাঠকবৃত্তে এহেন অবমূল্যায়নের কারণ নারীবাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতাই। আজও নারীবাদের কেতাবি অনুশীলন শহুরে মধ্য-উচ্চবর্গীয়, অভিজাত, হিন্দু মহিলাদের কুক্ষিগত। বহুক্ষেত্রেই তাই, হয়তো অজান্তেই, বাংলার নারীবাদী কল্পনা তথা তত্ত্বায়ন বাঁধা পড়ে থাকে পাশ্চাত্য তথা ইংরেজি ভাষাভিত্তিক ভাবনার আদলে।
বাংলার আঞ্চলিকতা যদি-বা গুরুত্ব পায়, তাও নিতান্তই অভিজ্ঞতা বা স্থানীয় ইতিহাসের স্তরে; তত্ত্বভাবনার জমিনে নয়। ইংরেজি তত্ত্বায়ন আর বাংলা অভিজ্ঞতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঔপনিবেশিকতার দেওয়াল।
এই দেওয়াল ভেঙে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা ‘নারীবাদের নানা পাঠ’। নারীবাদের বিশ্বজনীনতাকে অস্বীকার করে নয়— বরং আঞ্চলিকতার সঙ্গে তার নিয়ত সংলাপ ও বোঝাপড়ার পরিসর তৈরি করার, প্রান্ত থেকে কেন্দ্রকে পড়ার এক সামূহিক প্রকল্প। সংকলিত হয়েছে বাংলা ভাষায় নারীবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত গবেষক, বিশেষজ্ঞ, এবং অ্যাক্টিভিস্টদের রচনা।
ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থেকেই সাধারণত তৈরি হয় জ্ঞান। সেই আলোকবৃত্তের বাইরে তাকাতে হলে রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তাই এই সংকলনে আছে চারটি অংশ: তত্ত্ব ও ধারণার রাজনীতি, পরিচিতির রাজনীতি, উপস্থাপনের রাজনীতি এবং অনুভূতির রাজনীতি। নারীবাদকে চার রঙের আলোয় পড়ে দেখা। ভাবনা থেকে অভিজ্ঞতা, তত্ত্বায়ন থেকে আন্দোলনের নানান স্তরে ক্ষমতার নানান পরতকে উন্মোচন করে দেখা— নারীবাদী রাজনীতির বৃহত্তর পরিসরের ভিতর থেকেই।