‘নিঃশব্দে নির্বাসন’ একটি মিশ্র স্বাদের গল্প সংকলন। আলোকবিন্দু দূরে প্রক্ষিপ্ত হলেও টান থাকে তার কেন্দ্রের দিকে। তেমনি এই গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলোর ঘটনা, চরিত্র-পাত্র, পরিবেশ-প্রতিবেশ, ভাষা, সংলাপ, আচার, সংস্কৃতি বিচিত্রমুখী হলেও তা মানব-জীবনকেন্দ্রিক মৃত্তিকাসংলগ্ন বোধ ও বোধির বৃত্তায়নে আবর্তিত। ছোটোগল্প কখনো জীবনবিচ্ছিন্ন নয়। জীবনের নানা রূপ-রূপান্তর, উত্থান-পতন, বিনাশ-নির্মাণ, সংঘাত ও সংহতির পরিশীলিত ভাষাচিত্র ছোটোগল্প। একবিংশ শতকের মানব মনস্তত্ত্ব, তার চিন্তার স্বাতন্ত্র্য ও বোধের বিনির্মাণ সাহিত্যের পঠন-পাঠনকে যেমন বদলে দিয়েছে তেমনি ছোটোগল্পের ধারায় এনেছে বিচিত্র মাত্রিকতা। ‘আর এক শ্রাবণের অপেক্ষা’, ‘লোভ’, ‘নিঃশব্দে নির্বাসন’, ‘বিকেলে ভোরের ফুল’, ‘মৃত মানুষের গন্ধ’, ‘কলঙ্কিনী’, ‘তুমি কথা রাখোনি’, ‘শেষ কথা’ গল্পগুলোতে দ্বান্দ্বিক জীবনের সংকট যেমন দৃশ্যমান; তেমনি তা থেকে উত্তরণের সহজ দর্শনের বাণীও সেখানে অনুচ্চারিত নয়। ‘নিঃশব্দে নির্বাসন’ নাম গল্পটিতে দুটি বোবা নরনারীর জীবন মনস্তত্ত্ব শব্দবন্দি হয়েছে। অলৌকিকতা ও জাদুবাস্তবতার নিরীক্ষাধর্মী সন্ধান মিলবে ‘লোভ’ ও ‘মৃত মানুষের গন্ধ’ গল্প দুটিতে। করোনাকালীন এই মহামারিতে সমগ্র বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, বিপন্ন; তখন আশাহীন মানবতার কাছে এই গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলো স্বপ্ন ও সম্ভাবনার বাণী পৌঁছে দেবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।