‘কিছু কবিতা লতাগুল্মময় আশ্চর্য সব স্থানে/ লুকিয়ে থাকে; ওখানে আকাশে উপুড় হয়ে/ মেঘেরা শুয়ে থাকে-নিবিড় ঘাসে শুনশান!/ ওই মেঘের ভেতরে-ওই লতাগুল্মের ভেতরে মৃদুমদির কবিতাদের আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি’...কবিতা মাহবুব আজীজের কাছে অনুভূতির নিবিড়তম স্পর্শ; তাঁর কবিতা পাঠকের বোধে ও মননে ধীর অথচ গভীরে রেখাপাত করে। ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাকে কবিতার শরীরে সঞ্চার করে দেয়ার আশ্চর্য কুশলতায় দক্ষ মাহবুব আজীজ ফিরে ফিরে তাকান জীবন, মানুুষ, প্রকৃতি আর নিজস্ব বাস্তবতায়। ‘অস্তিত্বের লড়াই তীব্র দাঁতে বসায় কামড়। চারপাশে/ অচেনা ভিড়। তারপরও বেঁচে থাকবার আশ্চর্য সুস্বাদ-/ জীবনের পায়ে ইচ্ছে হয় তীব্র চুমো দিই’... জীবনতৃষ্ণা কবির প্রবল; তাই জগৎ ও জীবনের খুঁটিনাটি সবই তার সুষ্মিত আগ্রহে স্নাত- যদিও কবির বোধে প্রবহমান অনন্ত নিঃসঙ্গতা আর সব ছাড়িয়ে মূর্ত হয়-‘বহমান অমেয় বাতাসের মতো/ অবিরাম দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের মতো/ আজন্ম একা বয়ে চলা সমুদ্রের মতো/ সীমিত আয়ুর মানুষও চিরপ্রবহমান-/ একাকী, আদি ও অন্তহীন-/ নিঃসঙ্গতার মতো একা!’...
মাহবুব আজীজের কবিতা তাই দার্শনিক জিজ্ঞাসায় দীপ্ত-মানুষের গন্তব্য ও পরিণতি নিয়ে রয়েছে কবির হাহাকারভরা ভাষ্য; সুখ ও দুঃখের বিলোড়নে উদ্ভাসিত মানুষকে তিনি দেখতে চান হাস্যময়, জীবনরসে পরিপূর্ণ- তাই তাঁর উচ্চারণ-‘যতটুকু দেখা যায়-ভাবনায় কুলোয়/ তা নিয়েই এতো তর্ক/ হানাহানি; রক্তারক্তি! জিঘাংসার চূড়ান্ত!/ আর যা দেখা যায় না; কল্পনার সীমা পরিধির মধ্যে আসে না/ তা থেকে যায় আকাশের ওপারে আকাশে’...
‘নিঃসঙ্গতার মতো একা’-য় রয়েছেন এমন এক কবি-যিনি নিঃসঙ্গ ও নীরবতাকাক্সক্ষী; এই কবি ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক-আখ্যান তাঁর কবিতায় প্রায়শ উজ্জ্বল হয়, তিনি গীতিময়। কল্পনা, প্রতীক, দৃশ্যকল্পে তিনি বাস্তবতা ও পরাবাস্তবতার হাত ধরে কবিতার মধ্যে সঞ্চার করেন নানা অনুভব ও প্রশ্নমালা।
আধুনিক বাংলা কবিতার চিরায়ত ধারাবাহিকতায় মাহবুব আজীজের কবিতার সুর ও স্বর ব্যতিক্রমী ও সৃজনীভাবনাসমৃদ্ধ; তাঁর কবিতা দূরগামী ও নিজস্বতাচিহ্নিত।