বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন-এর সুদীর্ঘ উপন্যাস ‘নূরজাহান’ যে-গ্রামবাংলার বাস্তব চিত্র ধারণ করে আছে, সেই গ্রাম নির্মীয়মাণ এক পাকা সড়কের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। শহরের হাওয়া লেগে গেছে যেন গ্রামে। মানুষের মধ্যে উত্তেজনা। তবু এখনও ঢোলকলমির গাঢ় সবুজ পাতায় বসছে লাল ফড়িং, কাইত্তানি অর্থাৎ কার্তিকের বৃষ্টিতে ডাগর হচ্ছে বাকসা ঘাস, চালতা পাতার ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ছে অদ্ভুত উষ্ণ রোদ। এসবের মধ্যেই বড় হচ্ছে পল্লিবালিকা নূরজাহান। শিশুর মতো সরল হাসি লেগে থাকে তার মুখে। শীতের খেজুর গাছের অপেক্ষায় বসে থাকে দবির গাছি। আর ভাবে, বড় চঞ্চল তার মেয়েটি বিয়ের পর কোন সংসারে গিয়ে খাঁচার পাখিটি হয়ে যাবে। নূরজাহানের বড়-হয়ে-ওঠা, বিয়ে, দুর্ভাগ্য, ভণ্ড ফতোয়াবাজের হাতে অপমানিত হওয়া এবং শেষমেশ আত্মহত্যার করুণ কাহিনির পাশে লেখক এক গ্রামীণ জনপদের মানুষের নিখুঁত জীবনচিত্র এঁকেছেন। যে জীবন দোয়েলের শালিখের, সে-জীবনের অনাবিল প্রবাহকে পঙ্কিল করে তোলে কারা?অসামান্য ‘নূরজাহান’ উপন্যাসে নির্যাতিতা মেয়েটির আত্মহত্যা প্রতিটি হৃদয়ে যে-আগুন জ্বালে, সমাজের শুদ্ধিকরণে সে-আগুন চিরজাগরূক।