গল্পলেখক হিসেবেই তাঁর আত্মপ্রকাশ, ব্যাপক পরিচিতিও বটে। অকল্পনীয় ক্ষুরধার ভাষা। আখ্যান বিন্যাসে হাজির করেন কঠিন কঠোর এক বিশ্বকে। শিবনারায়ণ রায় যেমন লেখেন, ...লেখাগুলিতে যেমন আছে তীব্র সংহত ক্রোধ, তেমনি গভীর মমতা, তীব্র পর্যবেক্ষণ আর ভাষার নিপুণতা... যেমন নির্মেদ গদ্য তেমনই নিরুচ্ছ্বাস আর্তি। পাঠকের অন্তরের মর্মমূলে পৌঁছবার এমনি এক হাতিয়ার অর্জন করেছেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।রুক্ষ কঠিন রাঢ়বঙ্গের পটভূমি থেকে দক্ষিণবঙ্গের জলজঙ্গলে তাঁর গল্পের জায়গা-জমির বিস্তার। আর যে মানুষেরা তাঁর গল্পের চরিত্র- তাদের ভাঙাগড়া, দুঃখকষ্ট, হতাশা, সংগ্রাম, আকাঙ্ক্ষা, যাপন, মনোজগতের বিকাশ ও বিকার- এই নিয়েই গড়ে উঠেছে তাঁর গল্পের ভুবন। অদ্ভুত এক শিল্পিত দক্ষতায় তাঁর কলমের আঁচড়ে মূর্ত হয়ে ওঠে ভগ্ন ক্লান্ত হতোদ্যম মানুষের পতন বন্ধুর অভ্যুদয়ের যাত্রাপথ, সময় ও অসময়ের ইতিকথা। এরই সঙ্গে মিশে যায় দেশকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। অনিবার্যভাবে এসে যায় দেশভাগ, দেশত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপট। বস্তুত পাঠকমনে তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জাগিয়ে তোলেন এক জীবনবাদী চেতনা। এই অসামান্য সৃজনী উদ্ভাসই তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য, স্বকীয়তায় যা উজ্জ্বল এবং নির্মাণ কুশলতায় বাংলা সাহিত্যে অনন্যতার দাবিদার।