ভাষা, বাক্য, শব্দ, অর্থ, ব্যাকরণবিধি ও বাগ্ধারা, এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে যা শুদ্ধ রীতি বলে মান্য হবার যোগ্য, তারই সন্ধান-কর্মে নিযুক্ত রয়েছে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যবহারবিধি’র অন্তর্ভুক্ত গ্রন্থমালা। ভাষা যদি হয় একের ভাবনাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেবার মাধ্যম, তা হলে কীভাবে সেই মাধ্যমকে ব্যবহার করা সংগত, বাক্যের গঠন ও শব্দনিবার্চনই বা কেমন হওয়া উচিত, আবার যা আমাদের স্বাভাবিক বাগ্ধারা, তার সঙ্গেই বা আমাদের ভাষার সংগতি কীভাবে রক্ষিত হতে পারে, এই গ্রন্থমালা বস্তুত তারই পন্থা নির্দেশ করছে। ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও রূপান্তর—একে-একে সবই এসে যাচ্ছে এই গ্রন্থমালার পরিকল্পিত বৃত্তে। একই সঙ্গে ভাবা হচ্ছে এমন কয়েকটি কোষগ্রন্থ ও শব্দাভিধানের কথাও, ঠিক যে-ধরনের কোষগ্রন্থ ও অভিধান ইতিপূর্বে অন্তত বাংলা ভাষায় রচিত হয়নি। যাঁর যে-বিষয়ে চচা অথবা অধিকার, তাঁরই উপরে ন্যস্ত সেই বিষয়ে গ্রন্থরচনার দায়িত্ব। ব্যবহারবিধি-গ্রন্থমালায় প্রকাশিত প্রতিটি অভিমতই যে আনন্দবাজার পত্রিকার, এমন নয়। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায় না। এই পত্রিকা আসলে এ-ক্ষেত্রেও তৈরি করে তুলতে চায় এমন একটি পরিমণ্ডল, নানা বিষয়ে পারঙ্গম ব্যক্তিরা যেখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আপনাপন অভিমত ও সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করতে পারবেন। যাঁরাই লেখেন, তাঁরাই অনুভব করেন যে, লিখতে গেলে কত ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ২৫শে বৈশাখ লিখব, না ২৫ বৈশাখ? ২ মার্চ না ২রা মার্চ? সাল বোঝাতে ৯৪ না ’৯৪? তেলেগু না তেলুগু? প্লাষ্টার না প্লাস্টার? ইংগট না ইনগট? মনেই পড়ে না, কবে বেরিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি’ বা নজরুলের ‘অগ্নিবীণা’ কিংবা ক্ষীরোদাপ্রসাদের ‘আলিবাবা’। কবে জন্মেছিলেন কবি তরু দত্ত? মৃত্যুই বা কোন্ সালে? কখন কমা, হাইফেনই বা কখন? একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সম্পাদনার ক্ষেত্রেও। সতর্ক, অসতর্ক, বানান-জানা, না-জানা—হরেক লেখকের হরেক বিষয়ে লেখার প্রেসকপি তৈরি করেন সম্পাদক। তথ্যের যথার্থতা, যতিচিহ্নের শুদ্ধতা, বানানের সমতা-প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হয় তাঁকে। লেখকরা যেমন, সম্পাদকরাও তেমনই তাঁদের লেখালেখি ও সম্পাদনার কাজের সূত্রে তাই কেবলই হাতড়ে বেড়ান নানান কোষগ্রন্থ, অভিধান, আনুষঙ্গিক গ্রন্থরাজি। ইংরেজি ভাষার লেখক-সম্পাকদের হাতের নাগালে কিন্তু নানান সহায়ক অভিধান। যেমন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের রাইটার্জ ডিকশনারি কিংবা পেঙ্গুইন ডিকশনারি ফর রাইটার্জ অ্যান্ড এডিটর্জ। সংশয় দেখা দিলেই এই ধরনের অভিধানের উপর একবার চোখে বুলিয়ে নেন তাঁরা। অথচ বাংলা ভাষায় এই জাতীয় অভিধান একটিও নেই। সেই অভাব মেটাতেই এই সংগ্রহের পরিকল্পনা। বাংলা ভাষার প্রতিটি লেখক, পাঠক, সম্পাদকের নিয়ত প্রয়োজনের কথা ভেবে রচিত হয়েছে অনন্য এই অভিধান। এখানে রয়েছে বহু ধরনের তথ্য, বহু সংশয়ের নিরসন। শব্দ ও ভাষা ব্যবহারের, বানান ও বিরামচিহ্নের প্রয়োগের নিয়মকৌশল। এমন বহু কিছু জরুরি সব-কিছু।