এক সময় ব্যক্তির জমি চাষের অধিকার থাকলেও জমির মালিকানা থাকত রাষ্ট্রের হাতে। জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক-তৃতীয়াংশ কর হিসেবে নির্ধারিত ছিল। গ্রাম-সমাজ সেই কর সংগ্রহ করে জমিদারদের মাধ্যমে তা রাষ্ট্রের তহবিলে জমা করত। সংগৃহীত কর থেকে জমিদাররা পারিশ্রমিক হিসেবে পেতেন কিছু অংশ মাত্র। কিন্তু এই আদি পদ্ধতিটির পরিবর্তন ঘটে ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানী লাভের পর।
নানা খরচের অজুহাতে জমিদাররা তখন সাধারণ কৃষক ও আদিবাসীদের ওপর নানাভাবে করের বোঝা চাপিয়ে দিতে থাকে। ওই কর আদায়ে তারা লাঠিয়াল বাহিনীও গড়ে তোলে। আবার নির্দিষ্ট সময়ে কর দিতে না পারায় আদিবাসীদের জমিও তারা কেড়ে নেয়। সুযোগ বুঝে ওইসময় মহাজনরা চড়া সুদে কৃষকদের ঋণের জালে আটকে রাখে। পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীরাও তখন নানা শোষণ-উৎপীড়নের শিকার হতে থাকে।
এ সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা আইন-আদালত ও পুলিশের কাছ থেকে কখনই কোনো সহযোগিতা পেত না। ফলে এক সময় তারা ভয়ংকর অত্যাচার ও অবিচারের সম্মুখীন হয়। এই দাসের জীবন থেকে মুক্তির পথ খোঁজে তারা। ফলে লড়াই-সংগ্রাম শুরু করে অত্যাচারী জমিদার, জোতদার, মহাজন ও মুনাফালোভী ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে।
লেখক ও গবেষক সালেক খোকন আদিবাসী বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় এক যুগ ধরে। বিদ্রোহ-সংগ্রামে আদিবাসী গ্রন্থটিতে তিনি এ অঞ্চলের আদিবাসীদের গৌরবময় লড়াই-সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন সরল গদ্যে, অত্যন্ত সুপাঠ্যরূপে; যা গবেষণা-সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।