আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানকালে সবার মুখে মুখে ফিরেছিল শব্দবন্ধটি: ‘পোস্ট ট্রুথ’। উত্তরসত্য। এমন এক ভাবনাবিশ্ব যেখানে ‘সত্য’র একাধিপত্য ক্রমক্ষয়িষ্ণু। ভাষার প্যাঁচপয়জার যখন ঘেঁটে দিতে চায় ‘সত্য’ এবং ‘মিথ্যা’, ‘তথ্য’ এবং ‘বিকৃতি’র মাঝের স্বীকৃত দূরত্বগুলিকে, তখন ভাবা দরকার সমকালের কেমন ছায়া ধরা পড়ছে সে আয়নায়। এ-বই উত্তরসত্য যুগের ভাষা-বয়ানের সালতামামি। তাত্ত্বিক বিতর্ক থেকে হঠাৎ দৈনন্দিনে নেমে আসা এক দুনিয়াজোড়া মহাপরিবর্তনকে খোলা চোখে দেখে নেওয়ার সচেতন, সতর্ক এক প্রয়াস।
এই বইয়ের উদ্দেশ্য উত্তরসত্যের অনুসন্ধান। আজকের সভ্যতার মানসিকতা বোঝাতে ‘উত্তরসত্য’ শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার হয়, কিন্তু তার প্রয়োগ আবদ্ধ থাকে শাসক গোষ্ঠীর উচ্চারণ এবং সংবাদ ও সমাজমাধ্যম নিয়ে আলোচনায়। এই বইয়ে লেখক আরও গভীরে প্রবেশ করেছেন। নানা দিকে জাল বিস্তার করে তিনি খুঁটিয়ে দেখেছেন সমকালীন অর্থনীতির কয়েকটি দিক, বিশেষত টাকার বাজার; পণ্য বিপণন ও প্রচারের কৌশল; সমাজমাধ্যমে বার্তা সম্প্রচারের অভিনব পন্থা; এবং অপবিজ্ঞানের নতুন প্রসার। সেই সূত্রে উঠেছে কিছু মৌলিক প্রসঙ্গ, যেমন যুক্তি বনাম বিশ্বাস; আধুনিক সমাজে অতিকথা বা মিথ-এর প্রাবল্য; এবং ভাষার ভূমিকায় কিছু অতিবিশেষ উদ্ভাবন। এই সব কিছু আলোচনা হচ্ছে আধুনিক জীবনের বাস্তব প্রেক্ষিতে: এক দিকে দৈনন্দিন সমস্যা, সামাজিক সম্পর্ক ও স্থানীয় রাজনীতি; অপর প্রান্তে বিশ্ব রাজনীতি এবং যুগসত্তার কিছু বৃহৎ ঘটনা ও সমস্যা, এবং অতীতে তার ভীতিপ্রদ নজির। লেখকের আলোচনা আগাগোড়া এই বাস্তব পটভূমিকায়, পরিচিত সর্বজনীন জীবন ও তার বৌদ্ধিক ব্যাখ্যা অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত করে। সমাজতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ, ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ সকলেই বইটিতে মনের নতুন খোরাক পাবেন, কিন্তু এর প্রথম ও আদর্শ পাঠক সাধারণ সচেতন নাগরিক।