মুক্তচিন্তা তাই-যেখানে থাকে মানুষের সদিচ্ছা আর বিবেকী মনের বিচার, যেখানে পাওয়া যায় সত্যের স্পর্শ আর মানবিকতার স্বস্তিস্নিগ্ধ আশ্রয়। এটাই মুক্তচিন্তার প্রধান কথা। এর শৈথিল্য কিংবা অনুপস্থিতি মুক্তচিন্তার সংকট। এই সংকট তৈরি হয় ধর্ম, রাজনীতি ও রাষ্ট্রের নৈরাজ্য আর অরাজকতা থেকে। প্রধানত, উপাসক-সম্প্রদায়ের পরমত অসহিষ্ণুতা আর শাসকশ্রেণীর দমননীতি এর জন্যে দায়ী। এ শ্রেণীর অগণতান্ত্রিক মনোভাব এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার পিছনে থাকে যে হিংসাক্ষিপ্ত নীতি, জনসাধারণের মধ্যে বয়ে চলে সেই ভয়-আরক্ত বিহ্বলতা। এর থেকে শিক্ষিত মানুষও সত্যবাক্য হারিয়ে ফেলেন। এমন অবস্থায় সেখানে মুক্তচিন্তা হয়ে পড়ে আশ্রয়হীন। অথচ সত্যবাক্যের উচ্চারণ মুক্তচিন্তার প্রথম ও প্রধান শর্ত। শিক্ষাকে যে মানুষের মৌলিক অধিকার বলা হয়েছে, বাক্স্বাধীনতা ভিন্ন সেই শিক্ষা অসম্পূর্ণ। শুধু তাই নয়, যেখানে বাক্স্বাধীনতা নেই সেখানে শিক্ষা নেই। কেননা যা না হলে মানুষ প্রাণী হিসেবে বাঁচলেও তার মনুষ্যত্ব বাঁচে না, মনন ও চিন্তার সেই স্তরকে বলতে হবে মানুষের প্রকৃত মৌলিক অধিকার। শিক্ষার ভিতর থাকতে হবে মানুষের সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বজনীন দৃষ্টান্ত। শিক্ষা অর্জনের পক্ষে ভিন্ন রুচির অধিকার স্বীকৃত বলে এর সর্বপ্রধান কথা-জিজ্ঞাসা। এই জিজ্ঞাসা থেকে ব্যক্তি তার শিক্ষা পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নেবে। মুক্তচিন্তা মানুষের এই অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে। বর্তমান লেখাগুলির ধ্রুব-লক্ষ্য সমকালীন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আবহ।