শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা। বিবিসি বাংলা ২০০৪ সালে একটা জরিপ করেছিল, কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাতে দেখা যায়, শ্রোতাদের ভোটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রবীন্দ্রনাথের নাম আসে তালিকার দুই নম্বরে। এ প্রসঙ্গে গোলাম মুরশিদের মত প্রণিধানযোগ্য : ‘বাংলাদেশ নামক একটা দেশের জন্ম দিয়ে মুজিব যে-ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন, বাঙালি সংস্কৃতির ভাবী পথ নির্মাণে তা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর ফলে বাঙালিরা চিরদিনের জন্যে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলেও ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের অফুরন্ত সম্ভাবনা দেখা দেয় স্বাধীন দেশে বাংলাদেশে। সেই পথ ধরে বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, তথা সমগ্র বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাই স্বাভাবিক। অপর পক্ষে, ভারতের একটা অঙ্গরাজ্য— পশ্চিম বাংলায় সেই পথ অতো প্রশস্ত কিনা, সন্দেহের বিষয়। এ দিক বিবেচনা করলে আধুনিক বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন শেখ মুজিব। তাঁর চেয়ে অনেক প্রতিভাবান ও বহু বিখ্যাত বাঙালি গত এক হাজার বছরে অতো বড়ো মোড় পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ কারণে, তিনি সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি।' (মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর : একটি নির্দলীয় ইতিহাস)। ২০২১ সালে জানুয়ারিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস (এলএসই) ) দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্র আয়োজিত এক বক্তৃতায় অমর্ত্য সেন বঙ্গবন্ধুকে ‘বিশ্ববন্ধু' অভিধা দিয়ে বলেন, 'ভারতীয় উপমহাদেশ এখন একটি আদর্শিক সংকটে ভুগছে। উপমহাদেশের দেশগুলো বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার চিন্তা থেকে শিখতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মানুষের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে না, এটা তিনি বিশ্বাস করতেন না। বঙ্গবন্ধু চাইতেন, ধর্মকে যেন রাজনীতির হাতিয়ার করা না হয়।' (প্রথম আলো ডট কম, ২৮ জানুয়ারি ২০২১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন সেই ১৯৪৭-১৯৪৮ সালেই। স্বাধীন বাংলাদেশে অন্নদাশঙ্কর রায়কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু নিজেই এ কথা বলেছিলেন। তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। পাকিস্তানের কারাগারে তাঁকে বারবার বন্দি করা হত, গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা কারাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি নিতে বলত, কিন্তু শেখ মুজিব বলতেন, আমার জীবন যদি দান করতে হয়, আমি করব, তবুও বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রাম থেকে বিরত থাকব না, মুচলেকা দিয়ে মুক্তি নেব না। এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ)-র লোকেরা প্রতিবেদনে লিখত: এই বন্দির মনোবল অতিউচ্চ।