এক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)-এর পত্রাবলিকে শুধু সাহিত্য-পদবাচ্য বললে কম বলা হয়; নিঃসন্দেহে এ তাঁর সৃষ্টিশীলতারই এক উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ প্রান্ত। এই পত্রসাহিত্য যেমন ভিন্নতর মাত্রাবােধক, বিচিত্রস্বাদী, তেমনি স্বাতন্ত্র্যদীপ্ত। বিস্ময়কর এর বিশালতার দিকটিও। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিমানস তাঁর পত্রগুচ্ছে যেমনটা উন্মােচিত তেমনটা আর কোথাও নয়। রবীন্দ্রনাথের চরিত্রবৈশিষ্ট্যের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রান্তসমূহ অনাবৃত হয়েছে। পত্রাবলির পরতে পরতে। তার হর্ষ ও বিষাদ, বেদনা ও যন্ত্রণা, স্নেহ-প্রণয় ও কর্তব্যবােধ, ক্রোধ ও প্রশান্তি, বিরূপতা ও ক্ষমাশীলতা, আবেগ ও আবেগহীনতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন হয়ে আছে এই পত্রসাহিত্য। জীবনসম্পর্কিত গভীর দর্শন, ধর্মবােধ, ঈশ্বরচিন্তা, সৌন্দর্যচেতনা, জগদ্বিষয়ক উপলব্ধি, সাহিত্যবােধ প্রভৃতিরও এক আশ্চর্যদীপ্ত আকর হয়ে আছে তাঁর পত্রাবলি। কত অনায়াসে ও সাবলীল ভঙ্গিতে তিনি সুগভীর দার্শনিক প্রত্যয়সমূহকে ব্যক্ত করেন, সাধারণ সাংসারিক বিষয়ের ব্যাখ্যায়ও আরােপ করেন অসাধারণত্বের ব্যঞ্জনা তারও উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এই চিঠিপত্র।