আবু হামিদ মুহাম্মদ আল-গাযালীর জন্ম ইরানের তুস নগরে ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে এবং সেখানেই ১১১১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু। সে সময়ে মুসলিম জগতে ধর্ম ও চিন্তাক্ষেত্রে ভীষণ সংঘাত ও আন্দোলন চলছিল, একদিকে মুসলিম পণ্ডিতগণ এরিস্টটল, প্লেটো প্রমুখ গ্রিক দার্শনিকদের গ্রন্থসমূহের আরবি অনুবাদ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে ইসলামের। মৌলিক শিক্ষাগুলাে, যথা— সৃষ্টিতত্ত্ব, আল্লাহর অস্তিত্ব, তার একত্ব, পরলােক প্রভৃতি বিষয়কে তৎকালীন দার্শনিক সিদ্ধান্ত দ্বারা বিচার করে একপ্রকার অস্বীকার করছিলেন, অপরদিকে মুতাকাল্লিমগণ, যারা ইসলামি মৌলিক শিক্ষাগুলােকে সমর্থন করার জন্য যুক্তির আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং ইলমে কালাম নামে একটি পৃথক শাস্ত্রের সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁরা দার্শনিকদের কতকগুলি যুক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে তারই সাহায্যে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলােকে সমর্থন ও এ-সম্পর্কে দার্শনিকদের মতবাদগুলােকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করতে ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তৃতীয় আর একটি দল, যারা বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলিয়া, বাতিনিয়াহ, তা'লিমিয়াহ, হাশিশি প্রভৃতি বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল, তারা ইসলামের বিধিনিষেধ ও মৌলিক শিক্ষাগুলাের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে সেগুলাের মূলােচ্ছেদ করছিল। এছাড়া তারা মুসলিম জগতের বহু মনীষীকে গুপ্তভাবে হত্যা করে তৎকালীন মুসলিম জগতে বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিল। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, ইমাম গাযযালীর ন্যায় আবাল্য স্বাধীন চিন্তাশীল ব্যক্তির মানসজগৎকেও এ আলােড়ন খুব তীব্রভাবেই দোলা দিয়েছিল। বর্তমান গ্রন্থখানি তাঁর মানস জগতের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রমের জীবন্ত আলেখ্য— সত্যের সন্ধানে তিনি যে সমস্ত মনযিল অতিক্রম করেছিলেন ও যে সমস্ত প্রস্তুতির ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন এ পুস্তক তারই ইতিহাস। সুতরাং এ গ্রন্থকে তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন-চরিত্র বলা যায়।