বনজঙ্গলের পটভূমিতে বুদ্ধদেব গুহ যে অনন্য এ কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন বোধ হয় আর নেই। তাঁর শিক্ষিত ও অনুসন্ধিৎসু মনের তাগিদে প্রকৃতি বর্ণনাতেই তিনি থেমে থাকেননি নানা আদিবাসীদের সম্বন্ধে গভীরভাবে পড়াশুনা করে এবং তাদের নিজভূমে তাদের দেখে, এবং সেখানে দীর্ঘ দিন থেকে তাদের জীবনযাত্রার আশা-আকাঙ্ক্ষার, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গতার ছবির পর ছবি অনবদ্যভাবে অত্যন্ত যত্ন ও দরদের সঙ্গে এঁকেছেন একের পর এক উপন্যাসে। ওঁরাওদের নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘কোয়েলের কাছে’ ও ‘কোজাগর’। ওড়িশার কন্দ উপজাতিদের নিয়ে লিখেছেন ‘পারিধী’। মধ্যপ্রদেশের মুণ্ডা ও গোন্দদের কথা লিখেছেন ‘মাধুকরী’তে। আফ্রিকার ‘মাসাই’ উপজাতিদের নিয়ে লিখেছেন ‘ইল্মোরানদের দেশে’। মুণ্ডাদের মুণ্ডারী ভাষায় ‘সাসান্ডিরি’ শব্দটির মানে হচ্ছে কবরভূমি। ‘খুম্বুরী-জুম্বরী’ বা লোভই যে মানুষের সবচেয়ে বড় নাশক তা তিনি এই উপন্যাসে মুণ্ডাদের রূপকথা এবং খণ্ডিত জীবনযাত্রার মধ্যে দিয়ে বলতে চেয়েছেন। যে সত্য, মুণ্ডা জগতে সত্য সেই সত্যই আজ শহরের শিক্ষিত মানুষের জীবনেও সত্য। বিরিসামুণ্ডার দেশের মূরহু আর টেবো, খুঁটি থেকে সুকানবুড়ু ও তামারের মানুষজন বড় জীবন্ত হয়ে প্রতিভাত হয়েছে এই উপন্যাসে। বুদ্ধদেবের সৃষ্ট সির্কা মুণ্ডা, চাটান্ মুণ্ডা, মুঙ্গরী, ভোঁঞ্জ ইত্যাদি চরিত্র চিরদিন পাঠকের মনে দাগ কেটে বসে থাকবে। একবার পড়েই ভুলে যাবেন পাঠকেরা, এমন লেখা বুদ্ধদেব লেখেন না। শুধুমাত্র একটি গল্প বলার জন্যেই কোথাও গল্প বলেন না বুদ্ধদেব। গল্প ছাপিয়ে সবসময় বলতে চান অন্যকিছু। pointless লেখাতে তাঁর বিশ্বাস নেই। এবং নেই যে, তার প্রমাণ এই নবতম উপন্যাস ‘সাসান্ডিরি’।