আঠারো শতকের সূচনা থেকে উনিশ শতকের চল্লিশের দশক পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে কলকাতা ছিল বিলেতের সায়েবদের কাছে প্রবল আকর্ষণ। পলাশির পর যে প্যাগোডার গাছটা একবার নাড়া দেওয়ার বিপুল টানে বিলেতের তরুণ সায়েবদের কলকাতায় আসার উন্মাদনা, তা শুকিয়ে যায় আঠারো শতকের ওপর যবনিকা পতনের আগেই। প্রাক্-পলাশি ও উত্তর-পলাশি পর্বে সায়েবদের জীবনচর্যার দুই ছবি কোথাও সরে গেছে পরস্পরের কাছ থেকে, কোথাও থেকে গেছে একই রঙে। কোম্পানির আমলে কলকাতার সায়েব সমাজ একই ফ্রেমে বাঁধানো নয়। সায়েব সমাজের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য, বড় ও ছোট ইংরেজদের ভিন্নতর জীবনচর্যা, আঠারো শতকের প্রথমার্ধে কলকাতায় অনূঢ়া মেম-সায়েবদের অভাবে সায়েবদের ‘বিবি’ রাখার ঝোঁক, দ্বিতীয়ার্ধে বিপরীত ছবি-বরের খোঁজে কুমারী মেমদের ঢল, অনেকের ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়া কিংবা নাবালিকার কোনও প্রৌঢ়ের সঙ্গে বিয়ে প্রভৃতি প্রায় অনালোচিত ও কৌতুকপ্রদ বিষয় পাঠকের মনে একই সঙ্গে বিস্ময় ও করুণা না জাগিয়ে পারে না। কিছু মেম কলকাতাকে ঘৃণা করলেও, কেউ কেউ এই শহরকে ভালবেসে হয় বারবার এসেছিলেন দীর্ঘ সময় সমুদ্রযাত্রার ধকল সয়েও, কেউ বা ভালবেসে থেকে গিয়েছিলেন আমৃত্যু। কোম্পানির আমলে কলকাতারসায়েব-মেমদের জীবনের নানা বর্ণময় ও বর্ণহীন ছবি ভেসে উঠেছে এই গ্রন্থে।