সিকস্তি মানে ভাঙ্গন, নদীর ভাঙ্গন, উপকূলের পরিবর্তন। নদীর পাড় ভাঙ্গে আবার অন্যস্থানে জেগে ওঠে। মালিকানা নিয়ে কলহ, সংঘর্ষ এখানে নিত্য-নৈমিত্তিকের ঘটনা। প্রভাবশালী চক্রের সাথে এখানে যুক্ত হয় প্রশাসনের হাত। দরিদ্র ভূমিহীন বঞ্চিত হয় অন্যভাবেও - জমি জরিপে, খাস জমি বন্দোবস্তে। ক্ষমতার বলয়ে নানা অভিসন্ধির কূটচালে বিপণ্ন হয় তাদের স্বার্থ, বিনষ্ট হয় জীবন। ‘সিকস্তি’ বৃহৎ অর্থে সমাজের চারিদিকের ভাঙ্গন। শিক্ষায় সন্ত্রাস, রাজনীতিতে অস্থিরতা, মানবিক সম্পর্কের অবনতি, ন্যায়-নীতির বিপর্যয়, সুস্থ মূল্যবোধের অবক্ষয় এই ভাঙ্গনেরই নানা মাত্রা। গ্রামীন পটভূমি এই উপন্যাসের মূল হলেও শহর এসেছে গ্রামের বিপরীতে ভিন্ন শক্তির প্রতিভূ হিসাবে। গ্রাম আর নগরের টানা পোড়েনে এগিয়েছে কাহিনী - সম্পূর্ণতা পেয়েছে চরিত্রেরা। পরিচিত অনেক সমস্যা উপস্থাপিত হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। কেবল স্থান ও কালের প্রথাসিদ্ধ রীতিকে ভেঙ্গে নয়, পাত্র-পাত্রীকে একই সঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে উপস্থাপিত করে প্লট চক্রাকারে আবর্তিত হয়েছে। জীবন আর মৃত্যুর দেয়াল সরে সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অতিপ্রাকৃতের আবহ। আমাদের সমকালীন কথাসাহিত্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় লেখকের আরো একটি সফল সংযোজন ‘সিকস্তি’।