কবিজীবনের শুরুতেই বাল্যকালের চেনা পৃথিবী ‘মেহেরপুর’কে ‘মেঘের পুর’ লিখতে চেয়েছিলেন কেতকী কুশারী ডাইসন। ভৈরবী নামের শান্ত নদীতীরে প্রকৃতির সজল রূপকথা এক অর্থে তাঁর কাব্যধারার উৎসমুখ। ১৯৫৪-১৯৬২ সময়সীমায় রচিত কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। প্রথম সেই কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বল্কল’। ততদিনে কবি বিলেতের বাসিন্দা। কেতকীর বাংলায় কবিতাচর্চা সম্ভবপর হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং বুদ্ধদেব বসু। কিন্তু তিনি পেরেছেন। দীর্ঘ কবিজীবনের বাঁকে বাঁকে তুলে এনেছেন ‘অনেক শ্রমের রত্ন’। তীব্র প্রকৃতিপ্রেমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচিত্র মানুষরতন, কল্পনার সঙ্গে বিদ্যা। বিশ্ববোধ তাঁকে সারল্যে ভরপুর করেছে আরও। অনায়াসে বলতে পেরেছেন— ‘দ্যাখো, দ্যাখো, সবাই দৌড়চ্ছে—/পৃথিবী, সূর্য, সময়, আলো,/তুমি, আমি, বেন্জামিন, বিশ্ব,/স্বপ্নের সাইকেল, খেলার বল,/ল্যাবার্নাম, ফরসাইদিয়া, শিয়ালকাঁটা,/এমন কি ঘাস...’। সাধকের নির্মল উচ্চারণ—‘আমরা কবিরা পরস্পরে বাস করি’। চিৎকার নয়, ধীর গম্ভীর মর্মভেদী তাঁর স্বর— ‘পুরুষ তুমি কী চাও,/চুড়ি, না শাড়ি, মেয়ে?/... ... সে যদি খালি হাতে আসতে চায়,/খালি হাতেই আসতে দাও তাকে’। কেতকীর কবিতা চিরকালের পথে হাঁটে, পরনে ‘গাঢ় নীল শাড়ি, প্রান্তে আঁকা রূপালী ময়ূর’। তাঁর ‘কবিতাসমগ্র’ প্রথম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হল পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ— ‘বল্কল’, ‘সবীজ পৃথিবী’, ‘জলের করিডর ধ’রে’, ‘কথা বলতে দাও’ এবং ‘জাদুকর প্রেম, জাদুকর মৃত্যু’।