মেয়েটির সাথে তৃতীয়বারের মতাে দেখা, আশ্চর্য! এতগুলাে বছরেও তার চেহারার কোনাে পরিবর্তন হয়নি, এ হতেই পারে না। প্রথমবার দেখা হয়েছিল কৃষ্ণনগর রেলস্টেশনের পথে খুব বৃষ্টির রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার চরাচরে; বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কোনাে শব্দ শােনা যায় না। হুট করে কেউ এসে ছাতা ধরে মাথার উপরে, কিন্তু তাকে দেখতে পাই না, একটা গন্ধ পাই শুধু। গন্ধটা বকুল ফুলের। রিনরিনে নূপুরের শব্দ শুনে বুঝি, মেয়ে মানুষ। জিজ্ঞেস করি, এত রাতে!' সে বলল, “ভিজে যাচ্ছিলেন, এগিয়ে দিয়ে গেলাম; কিন্তু কুড়ি মিনিটের মধ্যেই ফিরে যাবেন।
চমকে উঠি, কুড়ি মিনিটেই কেন ফিরতে হবে! মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতেই সে অদূরে দাঁড়ানাে কদম গাছ লাগােয়া বাড়িটা দেখিয়ে বলল, “মশাই, ঐ বাড়ির নামেই আমার নাম।
দ্বিতীয়বার মেয়েটিকে দেখি কৃষ্ণনগর জমিদারমহলের ছাদে, ভর সন্ধ্যায় মােমবাতি নিয়ে হাঁটছে, শরীরে ভারী গহনা। জমিদারমহলের সাথে দাঁড়িয়ে বিশাল কদম গাছ, মহলের নাম ফলকে লেখা “স্মিতা মহল, ১২১৭ বঙ্গাব্দ”। বকুল ফুলের গন্ধে ট্রেনের কামরা মােহিত, আশপাশে কেউ নেই। খুট করে শব্দ হলাে। আঁৎকে উঠে বলি, “কে? ‘আমি মশাই, আমি। স্মিতা চৌধুরানি। ভয় পাবেন না, ট্রেনের বগি মাঝখান দিয়ে ছিড়ে গেছে।'
নীলাসাগর গ্রাম। এখানে তিনটি কবর লম্বা ভিটা, ময়লা ভিটা আর নতুন ভিটা; এ গ্রামের মেয়েরা অদ্ভুত কারণে হারিয়ে যায়। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলছে লাহুর নদী। লাহুর নদীর পানিতে মিশে আছে কৃষ্ণনগর জমিদারের ইতিহাস, সেই ইতিহাসের খোঁজ চলে নীলসাগর, হিরমুখী আর কৃষ্ণনগরের মাঠে-ঘাটে, শ্মশানে, কবরে। রাতের অন্ধকারে নদীর ঘাটে নৌকা থামে, নৌকোয় নিঃশব্দে উঠে যায় এক রমণী- যার শরীরভর্তি গুটি টিওমার…
স্মিতা পলকেই নিজেকে আড়াল করে।