মরহুম মৌলানা আবুল কালাম আজাদ লিখিত 'ইনসানিয়াত মওতকে দরওয়াজে পর' উর্দু সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। মরহুম মাওলানা ছিলেন উর্দু সাহিত্য-গগনের প্রদীপ্ত ভাস্বর। আলোচ্য পুস্তকখানিতে তিনি যে বিষয়টি তুলিয়া ধরিয়াছেন, উহা হইল জীবন সন্ধ্যায় মানবতার বিকশিত রূপ-যে রূপ বিকশিত হয় বিচ্ছেদ-বেদনা ও অনুশোচনার সকরুণ মহিমায়, সকল কৃত্রিমতা ও আবিলতার পরিসমাপ্তিতে।
এই আলোচনার জন্য তিনি বাছিয়া লইয়াছিলেন মহা মানবতার প্রতীক, সরওয়ারে দোজাহাঁ হজরত রসুলে পাকের মহা প্রয়াণের নিকটবর্তী কাল, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং ইসলামের ইতিহাস-খ্যাত কতিপয় বিশিষ্ট এবং উল্লেখযোগ্য জীবনের সায়াহ্ন কাল। কোলাহলমুখর জীবন সমুদ্রের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে এই সকল মহাজীবন কীভাবে বিচ্ছেদ-কাতর, আত্মোপলব্ধিতে সজাগ, অনুশোচনায় বিক্ষত ও বিশুদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল-কর্মে, কথায়, অন্তিম বাণীতে এবং অশ্রুরাশির মাঝে উহা স্বর্ণোজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে। মানবাত্মার আধ্যাত্মিক দর্শনের রহস্য যেন এইখানে তাহার দ্বার উন্মোচন করিয়াছে। সেই দিক দিয়া ইহা যেমন ব্যক্তির, তেমনই সমষ্টিরও আধ্যাত্মিক রহস্যের সন্ধান। মাওলানা মরহুমের বলিষ্ঠ লেখনী ইহাকে যেরূপ আবেগময় ভাষায় ব্যক্ত করিয়াছে, উহার তুলনা বিরল। আমি নিতান্ত অক্ষম হস্তে মূল পুস্তকের ভাব ও ভাষার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া অনুবাদ করিতে চেষ্টা করিয়াছি। এই গ্রন্থের আধ্যাত্মিক আবেদনই আমাকে এই কার্যে প্রেরণা যোগাইয়াছে। শ্রদ্ধেয় জনাব ফজলুল হক সেলবর্ষী সাহেব ও সর্বজনপ্রিয় কবি আহসান হাবীব সাহেব এই পুস্তকের খায়ের মকদম ও ভূমিকা লিখিয়া দিয়া আমাকে যেভাবে সম্মানিত করিয়াছেন, তজ্জন্য তাহাদের নিকট আমি সত্যই কৃতজ্ঞ।