তিনটি যুগ শেষ হল। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর। সত্য যুগে কোনও অবতারের কোনও ভূমিকা নেই। যাগ, যজ্ঞ, ধ্যান, ধারণা। পবিত্র মানুষের পবিত্র আশ্রমে যজ্ঞাগ্নি-ধূম উঠে যাচ্ছে আকাশ মণ্ডলে। সৃষ্টি হচ্ছে মেঘ। মেঘ থেকে বর্ষণ। ধরিত্রী ভরে উঠছে ধনধান্যে। ঋষিদের তপোবন। পাঠ-পঠন। বেদ, ব্রহ্ম। জ্ঞান, আত্মজ্ঞান। সত্যের পর ত্রেতা। অবতারদের আগমনের সূচনা। এলেন শ্রীরামচন্দ্র। শুরু হল ক্ষত্রিয় প্রাধান্য। ধনুর্বাণ, যুদ্ধ-বিগ্রহ। শুভশক্তি ও তামস শক্তির অহরহ সংগ্রাম। অতিষ্ঠ ঋষিকুল। অনিষ্টকারী রাক্ষস আর রাক্ষসীদের পরিকল্পিত অসভ্যতা। রচিত হল মহাকাব্য রামায়ণ। রাম ভগবানের ধর্ম ও কর্ম সমন্বিত অপূর্ব জীবনকাহিনি। এল দ্বাপর। কালের মঞ্চে বংশীধারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। প্রেম আর ভক্তির প্রবাহ। কৃষিনির্ভর বিরাট এক সভ্যতার অঙ্গনে মৈত্রীর বন্ধনে বাঁধা মানুষের জীবন। যমুনার দুই তটে সুন্দরের খেলা। কত অরণ্য, কত কুঞ্জ, কত উৎসব, প্রেম! শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর, বৈষ্ণব ধর্মের পাঁচটি অঙ্গ। একটিই মন্ত্র, ‘কৃষ্ণ কেশব পাহী মাং’, একটিই আহ্বান ‘রাধে, রাধে’। দ্বাপর এক ভয়ংকর কাল। অর্থ, বিত্ত, প্রতিপত্তির কাল। চরম ভোগ আর চরম দুর্ভোগের কাল। আর ভগবান নয় মানুষের কাল, রক্তপাতের কাল। মহাভারতের কাল। সেই কালেরই ‘শেষ প্রহর’। সময় এইবার পা রাখবে কলিকালে। রক্তাক্ত শেষ প্রহরে মহাভারতের অবসান। এখন কলি। মহাভারত এখন যেন শুধুই ভারত।